আমি মৃত্যুর স্বাদ পাই।

মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। আমরা জানিনা কখন এটা হবে, সাধারণভাবে একদিন অজান্তে এটা আমাদের কাছে চলে আসবে। বেশীরভাগ মানুষই জানে না কখন তার মৃত্যু হবে কিন্তু, আমি জানি। শূনতে অদ্ভুত সুনালেও আমি মৃত্যুর স্বাদ পাই। 

ভাবছেন কি বলছি আমি ? আসলে এটা শুনতে যেমন শোনায় তেমনি। যখনি আমি এমন-কারো রান্না করা খাবার খাই যে মৃত্যুর খুব নিকটে আমি তা আঁচ করতে পারি। এটা আমার কাছে পাব জি গেম খেলার মতই সাধারণ হয়ে গেছে। স্বাদটা যত কড়া হয় আমি বুঝি সে মৃত্যুর ততই নিকটে, কিন্তু স্বাদটা আমার ধরতে কখনই ভুল হয় না।

আমি প্রথমে আমার ক্ষমতাটা সম্পর্কে বুঝতে পারি যখন আমি ৩য় শ্রেণী তে পরি। আমার ক্লাস টিচার সেদিন খুবি হাসি খুসি মুডে ছিলেন, সে আমাদের সকলের জন্য চকলেট চিপ কুকি বানিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। আমারা খুবি এক্সসাইটেড ছিলাম কুকি পেয়ে।

চকলেট চিপ কুকি বরাবরি আমার খুব ফেবারিট, আমি বারবারি ধৈর্যহারা হচ্ছি চিন্তা করে কখন একটা কামড় বসাবো। যখন প্রথম কামড়টা বসালাম, তৎক্ষণাৎ আমার বমি আসা শুরু করল। গন্ধটা পচা ডিমের ১০ গুন বেশি।  জঘন্য একটা ফ্লেবার। 

আমি ক্লাসের অন্য সবার দিকে তাকাতে লাগলাম জানার জন্য কারোকি আমার মত অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা, কিন্ত দেখলাম সবাই মজা করে খাচ্ছে। আমার মাথায় চিন্তা এল, টিচার কি আমার সাথে প্রাঙ্ক করেছে ? ইচ্ছা করে এই কাজটা আমার সাথে করলেন ? আমি আমার গন্ধ নিলাম, গন্ধ পুরোপুরি সাধারণ কুকির মতই কিন্তু স্বাদ বমি আনিয়ে দেয়ার মত। 

আমি আমার কুকি গুলো আমার এক বন্ধুকে দিলাম এবং দেখলাম সে গপ গপ করে সব কুকি খেয়ে ফেলল, কোন অস্বাভাবিক রিয়েক্সান ছাড়াই। কিভাবে সম্ভব ? আমি চিন্তা করলাম আমি সম্ভবত অসুস্থ। 

সেইদিন ক্লাস সেস করলাম কোন রকম ভাবে। রাতে যখন ঘুমুতে যাব মা এসে বলল স্কুল কাল বন্ধ। 

আমি যখন কারন জিজ্ঞাস করলাম মা মুখ কাল হয়ে এল সে বলল, আমাদের ক্লাস টিচার গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার, সে এখন  জান্নতে। 

সেই ১০ বছরের আমিও একটা যোগসাজগ তৈরি করতে পেরেছিল সেই দিনের কুকি আর আমার টিচারের মৃত্যুর সাথে। কিন্ত আমি এতটা নিশ্চিত ছিলাম না তখন। 

আমি আমার ক্ষমতা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হই কয়েক বছর পরে।

আমি ১৪ আমার হাই স্কুল শুরু করেতে  যাচ্ছি। আমার মা অনেক খুশি, সে আমাকে আমার পছন্দের নাস্তা বানিয়ে দিল। বানানা পেন কেক, ক্রিসপি মেপেল  বেকন এবং গোল্ডেন হেস ব্রাউন। আমার মুখে পানি আসা শুরু করল রান্না ঘরের সামনে দিয়ে হাটতেই।

আমার মা অসাধারণ রাঁধুনি। আমার কাছে কিছুটা অবাক লাগল যখন আমি একটা অপরিচিত টেস্ট পেলাম খাবার মুখে দিয়ে, আমার টিচারের কুকি থেকে আলাদা, কিন্তু স্বাদ টা ভাল না। স্বাদটা খুবি হাল্কা, কিনতু সেটা সে আছে তা আঁচ করা যায়। বাবা আর ছোট ভাইকে কোন অভিযোগ করতে  দেখলাম না। 

আমিও করলাম না।

কয়েক মাস পর, মা ব্রেস্ট কেন্সার ধরা পরল। সে একজন কঠিন মহিলা, সে আমাদের জন্য খাবার বানিয়ে যেতে লাগল। খাবারের ফাউল স্বাদটা ক্রমাগত কঠিন হচ্ছে । মার স্বাস্থ্যর অবনতি হচ্ছে এর সাথে। আমি শেষ পর্যন্ত রান্নার দায়িত্ব নিলাম মার কাছে হতে। 

মা কেন্সার ধরা পরার ২ বছরের মধ্যে মারা গেলেন। আমার জীবনের সব চাইতে খারাপ সময়, কিন্ত আমি আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আস্তে আস্তে পরিস্কার হতে শুরু করি। 

বয়স বাড়তে লাগল আমি আমার মৃত্যুর স্বাদ সম্পরকিত ক্ষমতা সম্পর্কে আরও জানতে লাগলাম। বুজলাম যে প্রত্যেক মৃত্যুর আলাদা ফ্লেভার আছে। বুজলাম কনটা কেমন। 

উদাহরনসরুপঃ আমার টিচারেরে কুকির স্বাদ ছিল খুবি পচা ডিমের এবং সে একটা জঘন্য দুর্ঘটনার শিকার। মায়ের খাবার ছিল খানিকটা তেত, অসুধের মত, সে ক্যান্সারে মারা গেল। কোনটা মুখরোচক কোন স্বাদ না। 

আমার ক্ষমতার কোন উপকারিতা আমি এখন পাই নি। আমি একটা মানুষের মৃত্যু সময় জানি না, খালি বুঝি সে মারা যাবে। স্বাদ যত শক্ত, মৃত্যুতত নিকটে। 

আমি নিজের সাথে একটা খেলা করি। যখনি আমি আমার রান্না বেতিত কোন খাবার খাই আর স্বাদটি পাই আমি ধারনা করার চেষ্টা করি সে কিভাবে মারা যাবে। আমি অবিটুয়ারি পত্রিকা পত্রিকা থেকে জানার চেষ্টা করি আমার ধারনা কতটা সঠিক। আমি খুব ভাল হয়ে উঠেছি এই খেলায়। 

আমার এই পোস্টি দেয়ার কারন আমার এই ক্ষমতা আমাকে কিছু দিন যাবত বিচলিত করছে। 

আমার গার্ল ফ্রেন্ড এবং আমি কিছু দিন আগে বাসায় পিজ্জা বানালাম। টিভির মত আমার ডো বাতাসে মেলে দিলাম ।

পিজ্জা অসাধারণ হল, দেখতে বেশ ভাল, একটু ঠাণ্ডা হওয়ার সাথে সাথে মুখে পুরে দিলাম। স্বাদটা তৎক্ষণাৎ আমাকে একটা ধাক্কা দিল, এই স্বাদ আমি কখনই আসা করি নি।

স্বাদটা …… খুনের। 

এটা সম্ভব না। আমি আরেকটা কামড় বসালাম, স্বাদটা এখনো আছে। আমি এই স্বাদটা আগেও অনেক বার পেয়েছি, তবুও আমি মেনে নিতে পারছি না।

আমার প্রশ্ন ছিল, স্বাদটা কার মৃত্যুর ? আমার দুই জন এক সাথে পিজ্জা বানিয়েছি ? আমি কি খুন হব ? নাকি দুজনেই ?নাকি একজন হব আরেক জনের হাতে ?

আমার মনে এখন অনেক প্রশ্ন, আমার হাতে সময় খুব কম। স্বাদ-টা খুব কঠিন, জিনিস-টা খুব তারাতারি হবে। 

আমার এখন একটা সন্দেহ হচ্ছে, আমার গার্ল ফ্রেন্ড কিছু দিন যাবত অদ্ভুত আচরণ করছে, সে যখনি ফোনে তাকে মৃদু স্বরে কথা বলে। এখনও সে মোবাইল অন্য রুমে আস্তে আস্তে কথা বলছে । সে কি আমাকে খুনের প্লান করছে ?

আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি বসে থেকে এটা হতে দিতে পারি না। সে তার ফোন রাখার পর আমি আজি এর এক ব্যবস্থা করব। আসা করছি স্বাদটা চলে যাবে। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *